আজ- রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ ইং, ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Email *

শিরোনাম

  নমোফোবিয়াকে না বলুক নরনারী       Empathy, Patriotism & Commitment Group: একটু বিশ্লেষণ       বৃক্ষ রোপণের ৭ তারকা ও ১ শিল্পী       ‘পরিবর্তন চাই’ এর চার বছর       নামে কী বা আসে যায়       লৌহজং ‘সামাজিক আন্দোলন’ – আমার সুখ স্মৃতি       `একাত্তরের জননী’র সন্তানেরা       মনোয়ারাঃ সক্ষম সন্তানদের মরতে বসা মা       নদী-খাল উদ্ধারে সফল, সফলতার পথে এবং সম্ভাব্য অভিযান       মাছের পেটের রড থেকে গরাদঘরে       পাবনায় নৌ-র‌্যালিঃ নদী উদ্ধারে নতুন উদ্ভাবন       আক্রান্ত সিটিজেন জার্নালিজম       দক্ষিণাঞ্চলে দুই সপ্তাহব্যাপী নিম্নচাপঃ উদ্ভাবন ও সিটিজেন জার্নালিজম বিব্রত       আইনজীবীর হৃৎকম্পে কাঁপছে দেশ       পাবলিক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতিচ্ছবি       জনশক্তিতে উদ্ভাবন       ফেইসবুক, বাংলাদেশ সরকার এবং রাজার ঘণ্টা       অধ্যক্ষ অনিমেষ ও সোশাল মিডিয়া       জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবায় সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রথা ভাঙ্গার গল্প       শিয়ালের কামড় থেকে সোশাল মিডিয়ার কামড়    

RMP’র মাদক ও জঙ্গী বিরোধী উদ্ভাবন ও অন্যান্য

Merriam Webstar ডিকশনারী অনুযায়ী পুলিশ ফোর্স বলতে বোঝায় প্রজাতন্ত্রের প্রশিক্ষিত ও বিশ্বস্ত অফিসারদের সমষ্টি যারা জনজীবনে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখে, আইন প্রয়োগ করে এবং অপরাধ চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করে। পুলিশ ফোর্সের এই আভিধানিক সংজ্ঞা রাজশাহীবাসী মনে প্রাণে বিশ্বাস করলেও নাগরিক জীবনের সর্বস্তরে এবং সব ধরণের সমস্যা মোকাবেলায় যে পুলিশের সহায়তা পাওয়া সম্ভব তা মানুষের ধারণায় ছিল না। কয়েক মাস আগেও রাজশাহী মহানগরীতে ছিলো মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহার। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন হয়ে পড়েছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল জঙ্গীবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুন ও পুলিশ আক্রান্তের মতো ঘটনায় রাজশাহী ছিলো পত্রিকার শিরোনামে। এমনই ক্রান্তিলগ্নে জনাব মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম মহোদয়ের পুলিশ কমিশনার, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ হিসাবে পদায়ন। তিনি তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি, অভিজ্ঞতা এবং দূরদৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে RMPকে নিয়ে গেছেন জনগণের দোরগোঁড়ায়। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে জঙ্গীবাদ নির্মূল, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, কমিউনিটি পুলিশিংকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন, অভিযোগ বক্স প্রতিষ্ঠা, বীট পুলিশিং প্রভৃতি নানা পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে জনবান্ধব RMP প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তাই RMP এখন Rajshahi Metropolitan Police ছাপিয়ে Rehabilitation, Mobilization & Philanthropyর মূর্ত প্রতীক।

মাদক বিরোধী প্যাকেজ
মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান নতুন কিছু নয়। মাদকসেবীদের গ্রেফতার করা, মাদক ব্যাবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনা, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাঝে মাঝে সভা করা এসব অনেক জায়গায়ই হয়, হয়েছে। কিন্তু আরএমপি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে মাদক বিরোধী কার্যক্রমকে একটি প্যাকেজের আওতায় এনে অনন্য উদাহরণ তৈরী করেছে। কাজটি শুধু শাসনের লাঠি দিয়ে নয় বরং সচেতনতার বাঁশি বাজিয়ে, সোশাল রেসপনসিবিলিটি জাগিয়ে, সুচিকিৎসার সুযোগ দিয়ে, সসম্মানে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

বর্তমান পুলিশ কমিশনার যোগদানের পর নিজেই পুরো টিমসহ নগরীরর আনাচে কানাচে মাদকপপ্রবণ
এলাকায় শুরু করেন মাদক বিরোধী সমাবেশ। প্রথমে মাদকের আখড়া বলে পরিচিত পঞ্চবটি, এরপর ছোট বনগ্রাম, কোর্ট রেলস্টেশন, গুড়িপাড়া, কাঁটাখালী বাজার, রামচন্দ্রপুর, খড়বোনাসহ দুর্গম চর এলাকা চর মাঝাড়দিয়ার, চর শ্যামপুর এবং চর খিদিরপুরেও সমাবেশ করেছেন তিনি। সভায় প্রথমে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এরপর সময় বেঁধে দেয়া হয় মাদক ব্যবসা পরিত্যাগ করে ‘আলোর পথে ফেরা’র। একই সাথে চলতে থাকে মাদক বিরোধী চিরুনী অভিযান। ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। একে একে প্রায় ৩০০ জন মাদক ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিনের মাদক ব্যবসা পরিত্যাগের ঘোষণা দেন। আরএমপি কমিশনারের কক্ষে নয়, জনসম্মুখে। রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে শুরু করা হয়েছে ‘আলোর পথে ফেরা’ কর্মসূচি।

কিন্তু ফুলের সাথে ফলও দরকার। সেজন্য সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও চেম্বার-অব-কমার্স এর সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকসমূহকে তাদের corporate social responsibility থেকে এগিয়ে আসতে আহবান জানানো হয়েছে। আরএমপি কমিশনারের এসব আন্তরিক উদ্যোগের ফলে মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীকে দান করা সম্ভব হয়েছে দোকান ঘর, ভ্যান, সেলাই মেশিন এবং নগদ অর্থ।

মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদর স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিসিক, এসিডিসহ আরও অনেকের সাথে করা হয়েছে মতবিনিময় সভা। সবগ্রলো প্রতিষ্ঠানই এগিয়ে এসেছে মাদক ব্যবসায়ীদের বা তাদের সক্ষম সন্তানদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও আর্থিক বিষয়ে সহায়তার জন্য।

অনেক সময় বিভিন্ন মামলা পরিচালনার খরচ যোগাড় করতে পুণরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও দেখা যায়। বিভিন্ন মাদক মামলার আইনজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় আরএমপি হেড কোয়ার্টারে। কমিশনারের অনুরোধে মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োজিত আইনজীবীগণ আশ্বাস দেন বিনা/কম মূল্যে তাদের মামলা পরিচালনার।

মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হলে মাদকের চাহিদা বা সেবন বন্ধ করা দরকার। কারণ চাহিদা থাকলে যোগান বন্ধ করা কঠিন। সে উদ্দেশ্যে মহানগরব্যাপী মাদক সেবনকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর সাথে আলোচনায় বসা হয়। নগরীরর ৩টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র আরএমপি’র আহবানে এগিয়ে আসে স্বল্প খরচে চিকিৎসা দেবার জন্য। একই সাথে নিরাময় কেন্দ্র হতে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারী আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আরএমপি।

মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন হতে ফিরে আসা দরিদ্র ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি সমিতি। পাশাপাশি একটি কুটির শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। যেখানে মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে কাপড় সেলাই, বুটিকের কাজসহ বিভিন্ন হস্ত শিল্পের কাজ করবে। তাদের এ সকল কাজ বাজারজাতকরণের জন্য কাপড় ব্যবসায়ীদের সাথেও চলছে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও তার চৌকষ বাহিনী নিরলস প্রচেষ্টা ও অদম্য শক্তি দিয়ে প্রতিটি থানা এলাকার অপরাধপ্রবণ স্থানে, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভা সমাবেশের মাধ্যমে মানুষকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছেন। বিভিন্ন মেস, ছাত্রাবাস এবং সন্দেহভাজন স্থানে নিয়মিত চালানো হয়েছে বিশেষ অভিযান। মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি বাড়ি/মেসের মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে নির্ধারিত ফরমে। সেজন্য জঙ্গীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।

বীট পুলিশিং
চুরি ডাকাতিসহ সকল সামাজিক অপরাধ যেমন- মাদক, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ইত্যাদি দূর করার জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে বীট পুলিশিং যা সময়ের দাবী। রাজপাড়া ও বোয়ালিয়া থানাকে ৯টি এবং মতিহার ও শাহমখদুম থানাকে ৮টি বীটে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাগে এসআই পদমর্যদার একজন কর্মকর্তাকে ইনচার্জ করা হয়েছে। এলাকা ছোট হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের কাছে তা সম্পূর্ণ পরিচিত থাকবে, অপরাধীদের সম্পর্কে পুলিশের ধারণা সৃষ্টি হবে, এবং পুলিশের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আরএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে বেড়েছে সেবার পরিধি। প্রতি থানায় গঠন করা হয়েছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল যেখানে ১ (এক) জন নারী পুলিশ সদস্য ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত থাকেন। সেখানে নারীদের সমস্যাসমূহ ধৈর্য্য সহকারে শুনে প্রয়োজনীয় উপদেশ, আইনী পরামর্শ, তথ্য ইত্যাদি প্রদান করা হয়।

স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং
কমিউনিটি পুলিশিং ছিলো কিন্তু স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং আরএমপির নিজস্ব উদ্ভাবন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি সীমাবদ্ধ ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর সাথে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রাথমিকভাবে রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রুয়েট এ গঠন করা হয়েছে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি। পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ, বারিন্দ মেডিকেল কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকবিরোধী সমাবেশের আয়োজন বেশ ফলপ্রসু হয়েছে। ফলে মহানগরীতে অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশী কার্যক্রম ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং প্রশংসিত হচ্ছে।

সহকর্মীদের মোটিভেশন
সকল স্তরের অফিসার ও ফোর্সদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ আলোচনা ও মতবিনিময় সভা করে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা হয় যেমন, টিম ওয়ার্ক, নিবিড় তদারকি এবং পেশাদারিত্বের অভাব। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ত্বরিৎ সিদ্ধান্তে আয়োজন করেন মোটিভেশন সংক্রান্ত কিছু স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার।

ফোর্সদের জীবনমান উন্নয়ন
ফোর্সদের ব্যারাক, খাবার মেস, বাথরুম সংস্কার ও নতুন ব্যারাক নির্মাণের কাজে হাত দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মেসের খাবার ও রেশনের মান উন্নয়নের এবং হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সংস্কার ও মান সম্পন্ন কোম্পানীর ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে অফিসার ও ফোর্সদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

তথ্য/অভিযোগ বক্স
আরএমপি’র পক্ষ হতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ৩২টি এবং চর এলাকায় ১টি তথ্য ও অভিযোগ বক্স বসানো হয়েছে এবং প্রতিদিনই কম-বেশি তথ্য বক্সে পড়ছে। অফিসে না এসেও নাগরিকরা অনেক বিষয় জানাতে পারছেন এবং কমিশনার মহোদয় নিজে সেগুলো পড়েন এবং ব্যবস্থা নেন। বিষয়টি যে কেউ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

RMP App, ফেসবুক পেজ, আরএমপি নিউজপোর্টাল
গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে যে কেউ RMP App ডাউনলোড করে পুলিশকে তথ্য জানাতে পারেন। এ্যাপটি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করা দরকার মনে হয়। Rajshahi Metropolitan Police – RMP ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমেও জনগণ যে কোন অভিযোগ বা তথ্য (ছবি, ভিডিও ক্লিপ ও টেক্সট) যে কোন পুলিশ অফিসারকে জানাতে পারেন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রমগুলো জনগণকে জানাতে চালু করা হয়েছে আরএমপি, নিউজপোর্টালও। এমন ফেসবুক পেজ বা নিউজপোর্টাল অনেক দপ্তরেরই আছে কিন্তু নিয়মিত আপডেট করা হয় কমই। আরএমপি এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।

সার্ভিস ডেলিভারি ও কমিউনিটি পুলিশিং সেন্টার
রাজপাড়া থানায় সম্প্রতি সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে রাজপাড়া থানা এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া থানায় আগত সেবাগ্রহিতাগণ সেন্টারটিতে বসে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সেবা গ্রহণ করেন। ফলে থানার সেবা প্রদানেও শৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

নগরীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন
আরএমপি কমিশনার বলেন অপরাধ প্রতিরোধে ও অপরাধীদের শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সিসি ক্যামেরা। অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। সিসি ক্যামেরার মনিটর গুলো থাকবে আরএমপি সদর দপ্তরে। বর্তমানে ৬৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ক্যামেরা ফাংকশনিং থাকছে। ভবিষ্যতে এর আওতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

ব্লাড ডোনার্স ক্লাব
এর মাধ্যমে শুধু পুলিশ সদস্যই নয় যে কোন ব্যক্তির প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করা হয়। ইতোমধ্যে রাজশাহী কলেজ ও সরকারী মহিলা কলেজে ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।

দাপ্তরিক স্বীকৃতি
শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী, শ্রেষ্ঠ ওসি, সর্বোচ্চ উদ্ধার, কমিউনিটি পুলিশিং প্রভৃতি ক্যাটাগরিতে প্রতি মাসে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী পুলিশ সদস্যদের “ক্রেষ্ট ও সার্টিফিকেট অব এপ্রিশিয়েসন” প্রদান করা হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সহযোগিতার জন্য ‘দৈনিক যুগান্তর’ এর সাংবাদিক জিয়াউল গনি সেলিমকেও সম্মাননা প্রদান করার বিরল নজিরও স্থাপন করেছেন তিনি।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহযোগী ৬ টি এনজিওর সাথে আরএমপির সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আমি নিশ্চিত এটুআই এর ৫ দিনের ‘ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস’ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরএমপি কমিশনার অংশ নেননি।তাঁর জন্য বোধহয় প্রযোজনও নেই। এসপি থাকাকালীন সময়ে জয়পুরহাটে কমিউনিটি পুলিশিংকে তিনি যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন আর এখন আরএমপি কমিশনার হিসাবে মাদকমুক্ত রাজশাহী গড়তে মাদক সেবন ও ব্যবসা নির্মূলকে যে ধরণের সমন্বিত প্যাকেজের আওতায় নিয়ে এসেছেন সেটি অনেক বড় মাপের ইনোভেশন।তাঁর সুতীক্ষ্ম মেধা, পরিপক্ক অভিজ্ঞতা, ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, কাজের প্রতি আত্মগত অনুপ্রেরণা, সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে সমন্বয় ও সংযোগ রক্ষার কৌশল ইত্যাদি গুণাবলী তাঁকে সাহায্য করে সময়োপযোগী সব যুগন্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণে। কিন্তু আরএমপির সকল অফিসার নিশ্চয়ই এমন ইনোভেটিভ নন। তাই বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি আরএমপির অফিসারদের ৫ দিনের, নিদেন পক্ষে ২ দিনের ‘ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস’ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যুক্ত করার জন্য। এতে করে পুলিশি সেবার মান যেমন বাড়বে তেমনি নানা ধরণের উদ্ভাবনী কর্মকান্ডের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী দেশের উন্নয়নে আরও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারবে।

পরিশেষে বলতে চাই, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পুলিশ বাহিনী যেমন ‘জনগণের বন্ধু’ বলে পরিচিত, আমাদের এই প্রজ্ঞাবান, প্রত্যুৎপন্নমতি, সৃজনশীল কান্ডরী মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম এর সুযোগ্য নেতৃত্বে RMPও হোক  এ শহরের মানুষের আশ্যয়স্থল, নির্ভরতার অনন্য উদাহরণ যা দেখে সারা দেশের পুলিশ বাহিনী অনুপ্রাণিত হবার পাশাপাশি দেশের আপামর জনসাধারণ যে কোন প্রয়োজনে এবং বিপদে-আপদে চোখ বন্ধ করে পুরিশি সহায়তা খুঁজবে; পুলিশের এমপ্যাথেটিক এ্যাপ্রোচে নানা ধরণের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে শান্তিপূর্ণ জীবনের আস্বাদ পাবে। আর সেটাই হবে আরএমপির চমক! এইসব উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতি ও পুরস্কার!

Categories: উদ্ভাবন